ফিলিস্তিন, সিরিয়াসহ ৩৯ দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:২১ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছেন। নতুন ঘোষণায় সিরিয়া ও ফিলিস্তিনসহ আরব ও আফ্রিকা মহাদেশের সাতটি দেশকে যুক্ত করা হয়েছে। এরফলে দু’দফায় মোট ৩৯টি দেশ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ল। নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশগুলোর নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে কার্যত প্রবেশ নিষিদ্ধ হলো।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানায়। প্রসঙ্গত, ওয়াশিংটন ডিসিতে দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে গুলি করার ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর এই সিদ্ধান্ত আসল। ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তথাকথিত ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো’ থেকে অভিবাসন বন্ধ করার ওপর ‘স্থায়ী বিরতি’ দেয়ার কথা বলেছিলেন।
মঙ্গলবার নিজের আদেশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারণের পক্ষে একাধিক যুক্তি তুলে ধরে বলেন, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ক্ষেত্রে অভিবাসীদের যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করার সক্ষমতা সীমিত, অনেক জায়গায় নির্ভরযোগ্য রেকর্ড সংরক্ষণ ও তথ্য আদান-প্রদানের ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি কিছু দেশে চলমান সশস্ত্র সংঘাত, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। ট্রাম্প আরো বলেন, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা এবং ডোমিনিকা বসবাসের শর্ত ছাড়াই বিদেশিদের নাগরিকত্ব প্রদান করে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে।
হোয়াইট হাউস জানায়, গত জুন মাসে জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার প্রথম দফায় ১৯টি দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে সময় আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন থেকে অভিবাসী ও ভ্রমণকারীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনিজুয়েলার নাগরিকদের প্রবেশ আংশিকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছিল। গত মঙ্গলবার ঘোষিত নতুন সিদ্ধান্তে সম্পূর্ণ প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরো সাতটি দেশ যুক্ত হয়েছে-বুর্কিনা ফাসো, মালি, নাইজার, লাওস, সিয়েরা লিওন, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়া। একইসঙ্গে অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বেনিন, কোত দিভোয়ার, ডোমিনিকা, গ্যাবন, গাম্বিয়া, মালাউই, মৌরিতানিয়া, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, তানজানিয়া, টোঙ্গা, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে থেকে আসা অভিবাসী ও ভ্রমণকারীদের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
আরো পড়ুন : ফিলিস্তিনিসহ ৮ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
তবে বিবৃতিতে ফিলিস্তিনকে সরাসরি রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না, তাই আদেশে ‘ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নথি’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে ফিলিস্তিনিদের বর্ণনা করা হয়েছে এমন ব্যক্তিদের হিসেবে, যারা ‘ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারি করা বা অনুমোদিত ভ্রমণ নথি ব্যবহার করে ভ্রমণ করার চেষ্টা করেন।’ প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনিদের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো, যখন ইসরায়েল গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে প্রতিদিনই প্রাণঘাতী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরেই ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে অন্তত দুজন মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় যুক্তরাষ্ট্র-ঘোষিত একাধিক সন্ত্রাসী সংগঠন সক্রিয় রয়েছে এবং অতীতে তারা মার্কিন নাগরিকদের হত্যা করেছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক যুদ্ধের কারণে এসব এলাকায় যাচাই-বাছাই ও নিরাপত্তা যাচাইয়ের সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল বা অনেক ক্ষেত্রে কার্যত অনুপস্থিত হওয়ায় তাদের জারি করা নথির ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য আবেদনকারীদের যথাযথভাবে যাচাই করা সম্ভব নয়।
এদিকে সিরীয় নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্তটি এসেছে ওয়াশিংটন ও দামেস্কের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির ইঙ্গিতের মধ্যেই। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শাররা গত নভেম্বরে হোয়াইট হাউস সফর করেছিলেন। তবুও হোয়াইট হাউসের ভাষ্য অনুযায়ী, সিরিয়ায় পাসপোর্ট ও বেসামরিক নথি ইস্যুর জন্য কার্যকর কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নেই এবং সেখানে যথাযথ স্ক্রিনিং ও যাচাই-বাছাইয়ের ব্যবস্থাও অনুপস্থিত।
এমন প্রেক্ষাপটে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড অস্ট্রেলিয়ায় একটি ইহুদি উৎসবে ১৫ জনকে হত্যাকারী গণগুলির ঘটনার উল্লেখ করে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রশংসা করে সামাজিক মাধ্যম ‘এক্সে’ তিনি লেখেন, ‘ইসলামপন্থা ও ইসলামবাদ যুক্তরাষ্ট্র এবং সমগ্র বিশ্বের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।’ তার মতে, ইউরোপের জন্য হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে, অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা তৈরি হতে পারে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এখনো সময় আছে। গ্যাবার্ড আরো বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সীমান্ত সুরক্ষা, পরিচিত ও সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার এবং গণহারে যাচাই-বাছাইবিহীন অভিবাসন বন্ধ করাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, যা তার মতে আমেরিকানদের নিরাপত্তার জন্য জরুরি। এই অবস্থানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ট্রাম্পের রিপাবলিকান মিত্রদের অনেকেই ক্রমশ প্রকাশ্য ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য দিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে নামার সময়ই ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের প্রবেশের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ক্ষমতায় এসে প্রথম মেয়াদে তিনি একাধিক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
তবে তুর্কমেনিস্তান থেকে আগত ভ্রমণকারীদের ওপর আগে আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে দেশটি সাম্প্রতিক সময়ে উন্নতি করেছে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় কিছু ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তালিকাভুক্ত দেশগুলোর যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা (গ্রিন কার্ডধারী) এবং আগামী বছরের ফিফা বিশ্বকাপসহ বড় আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসরে অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদ ও সংশ্লিষ্ট কর্মীরা।
