আমেরিকার রাজনীতির সমীকরণ বদলে দিলেন মাস্ক, ট্রাম্পকে টেক্কা

হাসান শাব্বির
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৬ পিএম
নিজের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই আমেরিকা থেকে অভিবাসী তাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইলন মাস্ককেও দেশছাড়া করার হুমকি দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাতে দমে না গিয়ে আমেরিকার রাজনীতির সমীকরণই বদলে দিলেন ধনকুবের মাস্ক। নিজেই রাজনৈতিক দল খুললেন তিনি। তার দলের নাম আমেরিকা পার্টি। এ গোটা বিশ্বে উঠেছে আলোচনার ঝড়।
সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে নতুন দল খোলার ঘোষণা দিয়েছেন মাস্ক। তিনি লিখেছেন, আপনারা নতুন রাজনৈতিক দল চেয়েছিলেন। এবার তা পেয়েও গেলেন। অপচয় ও দুর্নীতির ভারে দেউলিয়া হওয়ার পথে আমেরিকা। এদেশে এখন গণতন্ত্র নেই। এরই মধ্যে মার্কিন মুলুকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতেই আমেরিকা পার্টি গঠিত হলো।
এর আগে এক্সে এক জরিপ চালান মাস্ক। সেখানে তিনি জানতে চান, আমেরিকায় নতুন রাজনৈতিক দল দরকার কিনা? ওই জরিপে দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ নতুন দলের পক্ষে মত দেন। অর্থাৎ ৮০ শতাংশ ভোটার নতুন রাজনৈতিক দলের সপক্ষে ভোট দেন। পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা পার্টি খুললেন মাস্ক।
গত কিছুদিন ধরেই ইঙ্গিত মিলছিল, রাজনীতিতে পদার্পণ করছেন মাস্ক। বিশেষ করে ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরার পর এমন সম্ভাবনার খবর উঠে আসছিল লাগাতার। টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা নিজেও সেই জল্পনা বাড়িয়ে তোলেন। অথচ কয়েক মাস আগেও পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল।
এবার ট্রাম্পকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট করতে পানির মতো মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেন মাস্ক। নির্বাচনে জয়লাভের পর প্রতিদানও দেন ট্রাম্প। মাস্ককে মার্কিন সরকারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেন তিনি। কিন্তু পরে কয়েক মাসের মধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলকে চমকে দিয়ে ভেঙে যায় তাদের বন্ধুত্ব।
এসময়ে একাধিক বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয় ট্রাম্প ও মাস্কের। ফলে আচমকা ট্রাম্প প্রশাসন থেকে সরে দাঁড়ান মাস্ক। প্রকাশ্যে ট্রাম্প সরকারের নানা সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন তিনি। তবে তাদের বন্ধুত্বের কবরে শেষ পেরেক হয়ে নেমে আসে ট্রাম্পের 'বিগ বিউটিফুল অ্যাক্ট'। এর আওতায় সরকারি ব্যয় হ্রাস, করছাড় প্রত্যাহারের মতো বহু সিদ্ধান্তের কথা জানায় ট্রাম্প সরকার।
'বিগ বিউটিফুল অ্যাক্টে' সীমান্তে দেয়াল তোলা থেকে অভিবাসীদের জন্য় বন্দিশিবির গড়ার কথাও বলা হয়েছে। এতদিন স্বাস্থ্যবিমা, খাদ্য নিরাপত্তা, গ্রিন এনার্জির ক্ষেত্রে অর্থ খরচ করতো মার্কিন সরকার। এ আইনে সেই খরচও কমিয়ে আনা হবে। ইতোমধ্যে সেই আইন পাসও হয়েছে।
ট্রাম্পের 'বিগ বিউটিফুল বিল’উত্থাপনের পর থেকেই বিরোধিতা করে আসছেন মাস্ক। তিনি দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের পাগলামিতে ভরা এ আইন পাসের ফলে আমেরিকার যুবসমাজের ঘাড়ে দেনা চেপে বসবে। দেশটি দেউলিয়া হয়ে যাবে। এরপরই নতুন রাজনৈতিক দল খোলার কথা বলেন মাস্ক।
তবে দল গড়লেও আমেরিকার রাজনীতিতে আমেরিকা পার্টি কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকরা। কারণ, দেশটির রাজনীতি বরাবরই দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় চলেছে। রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাটরা আমেরিকা শাসন করেছে। তবে মাস্ক বলেন, ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান ছাড়াও বিকল্প প্রয়োজন আমেরিকার। তাতে মতামত জানানোর সুযোগ পাবেন সাধারণ মানুষ।
বিগত কয়েক দশকে মার্কিন মুলুকে অসংখ্যবার মাথা তোলার চেষ্টা করেছে থার্ড পার্টি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন নাগরিকদের সমর্থন পায়নি। রিপাবলিকান অথবা ডেমোক্র্যাটদের রোষানলে পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে মাস্কের দল আমেরিকার রাজনীতিতে জায়গা করতে পারে কিনা, সেদিকে তাকিয়ে সবাই।