শাহরুখ খান : স্বপ্ন, সংগ্রাম আর সাফল্যের এক কিংবদন্তি
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৩৮ পিএম
শাহরুখ খান। ছবি : সংগৃহীত
মেট গালা অভিষেক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার- সময়, প্ল্যাটফর্ম আর প্রজন্ম পেরিয়েও শাহরুখ খান রয়ে গেছেন অমলিন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরো ভাইরাল হয়ে উঠছেন বলিউড বাদশা। আজ ৬০ বছর পূর্ণ করেছেন বলিউড বাদশা। রোববার (২ নভেম্বর) বলিউডের বাদশা শাহরুখ খানের জন্মদিন।
১৯৬৫ সালের এই দিনে দিল্লিতে জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তি অভিনেতা আজও কোটি ভক্তের হৃদয়ে রাজত্ব করছেন। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি শুধুমাত্র বলিউড নয়, সমগ্র ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের এক অনন্য প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
শাহরুখ খানের জীবনের গল্প এক অনুপ্রেরণার কাহিনি। দিল্লির একটি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা এই যুবক অভিনয়ের জগতে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন মেধা, অধ্যবসায় ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে। ১৯৮৮ সালে টেলিভিশন সিরিয়াল “ফৌজি” দিয়ে তার যাত্রা শুরু। এরপর ১৯৯২ সালে “দিওয়ানা” ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক ঘটে তার।
আরো পড়ুন : দীপাবলিতে লক্ষ্মীপূজা করলেন শাহরুখ-গৌরী, দিলেন যে বার্তা
তিনি সব শ্রেণির মানুষের ভালবাসা অর্জন করেছেন। অভিনয় দক্ষতায় জেনারেশন জেড বা জেনারেশন জির কাছে তিনি সমান গ্রহণযোগ্য। তারা তাকে রিমিক্স করে, মিলেনিয়ালরা তার সঙ্গে বড় হয়েছে, বেবি বুমাররা দেখেছে তার উত্থান। ভারত এবং বিদেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে শাহরুখ খান আজও হিন্দি সিনেমার অন্যতম পরিচিত ও প্রভাবশালী মুখ।
মে মাসে তিনি প্রথম ভারতীয় পুরুষ অভিনেতা হিসেবে মেট গালার রেড কার্পেটে হেঁটেছেন। জুনে এড শিরানের ‘স্যাফায়ার’ গানে বিশেষ উপস্থিতি দিয়েছেন। অক্টোবরের শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার স্কুইড গেম তারকা লি জং-জায়ের সঙ্গে রিয়াদে সেলফি ভাইরাল হয়েছে, যা ভক্তরা বলেছেন ‘শতাব্দীর সেরা কোলাব’। গুগল ট্রেন্ডস দেখাচ্ছে, তার জনপ্রিয়তা মরিশাস থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে।
খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করেও দর্শকের মন জয় করা শাহরুখ খান ৯০-এর দশকে পরিণত হন রোমান্সের রাজপুত্রে। “দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে”, “কুচ কুচ হোতা হ্যায়”, “মাই নেম ইজ খান” কিংবা সাম্প্রতিক “পাঠান”- প্রতিটি ছবিতেই তিনি প্রমাণ করেছেন নিজের বহুমাত্রিক অভিনয় প্রতিভা।
অভিনেতা ছাড়াও শাহরুখ একজন সফল প্রযোজক ও উদ্যোক্তা। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্ট আজ বলিউডের অন্যতম শীর্ষ প্রযোজনা সংস্থা। পাশাপাশি কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক হিসেবেও তিনি ক্রীড়াঙ্গনে সমান জনপ্রিয়।
তবে তার সবচেয়ে বড় শক্তি তার বিনয় ও মানবিকতা। খ্যাতির শীর্ষে থেকেও শাহরুখ আজও বলেন, “আমি এখনও সেই দিল্লির ছেলেটা, যার স্বপ্ন ছিল বড় পর্দায় হাসি ফুটানো।”
৬০ বছরে পা রাখা এই অভিনেতা আজও নতুন প্রজন্মের কাছে এক অনুপ্রেরণা— স্বপ্ন দেখা, পরিশ্রম করা ও কখনও হাল না ছাড়ার এক জীবন্ত উদাহরণ।
৮০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরুখ। প্রতিটি চরিত্রে তিনি নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেন। প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে তাঁর পূর্ববর্তী চরিত্রের প্রতিধ্বনি ভক্তদের মনে আবেগ জাগায়। সেপ্টেম্বরে ‘জওয়ান’-এর জন্য তিনি প্রথমবার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান পান।
অর্থনীতিবিদ ও ভক্ত শ্রেয়না ভট্টাচার্য তার বই ‘ডেমপারেটলি সিকিং শাহরুখ খান’-এ বলেন, শাহরুখ এমন এক প্রতীক, যার মাধ্যমে ভারতীয় নারীরা তাদের আকাঙ্ক্ষা, হতাশা ও স্বাধীনতার অনুসন্ধানকে প্রকাশ করেছেন। প্রবাসী ভারতীয়রা তার চরিত্রে নিজেদের সংস্কৃতি খুঁজে পান। জেনারেশন জেডের মধ্যেও তিনি মিম, টিকটক ও রিমিক্সের মাধ্যমে জীবন্ত।
তিনি নানা ভাইরাল মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন, গানের সঙ্গে নাচ, আইকনিক ভঙ্গি। উদাহরণ হিসেবে কানাডীয়-ভারতীয় র্যাপার টেশারের ‘ইয়াং শাহরুখ’ ইউটিউবে ২ কোটির বেশি ভিউ পেয়েছে। বৃটিশ গায়িকা দুয়া লিপারের ‘লেভিটেটিং’ গান শাহরুখের ‘ও লাড়কি যা’ গান নিয়ে মেশানো হয়েছিল।
ভেরা ওয়েসেল বলেন, শাহরুখ খানের স্থায়ী প্রভাবের পেছনে তার অসাধারণ ব্যবসায়িক বুদ্ধি আছে। তিনি প্রথম ভারতীয় তারকাদের একজন, যিনি অনলাইনে ভক্তদের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তুলেছেন। ইনস্টাগ্রামে ৪৮.৮ মিলিয়ন অনুসারী—যেখানে তিনি নিয়মিত ব্র্যান্ড প্রচারণা করেন। ফ্যাশন ও ট্রেন্ড বদলায়, কিন্তু শাহরুখ খানের জনপ্রিয়তা একদম কালজয়ী।
