×

রোগব্যাধি

পাঁচ হাসপাতালে রোগীর চাপ

Icon

সেবিকা দেবনাথ

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩২ এএম

পাঁচ হাসপাতালে রোগীর চাপ

ছবি : সংগৃহীত

ডেঙ্গু আক্রান্তদের বড় অংশ চিকিৎসা নেন দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে। এর মধ্যেও ঢাকার ৫টি হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর চাপ অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুরোগী সবচেয়ে বেশি ভর্তি হয়েছে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে। এরপরই ডেঙ্গুরোগীদের আস্থা মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। রোগী এই দুই হাসপাতালে ভর্তি হলেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। 

কোন হাসপাতালে কত রোগী ও মৃত্যু

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ অক্টোবর সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে ৫৮ হাজার ২৮০ জন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৪৩ জন। ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৫ হাজার ৩৬০ জন ভর্তি রোগী। এর মধ্যে ডেঙ্গুরোগী সবচেয়ে বেশি ভর্তি হয়েছে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে। এই হাসপাতালে ২ হাজার ৪৭২ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। এরপরই রয়েছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এখানে ভর্তি ডেঙ্গুরোগী ২ হাজার ৩৭৪ জন। ৩৪ জন মারা গেছেন। তৃতীয় অবস্থানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। এখানে ২ হাজার ৩৪০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে আর মারা গেছে ৬৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারাদেশের যে ৫৯ হাসপাতালের তথ্য দেয়, তার মধ্যে ঢামেক হাসপাতালে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১ হাজার ৩৭৮ জন রোগী ভর্তি হয়; মারা যান ১২ জন। মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি রোগী ১ হাজার ১৬১ জন। ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞের বক্তব্য

সরজমিনে দেখা গেছে, ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় ৪০ বেডের আলাদা ইউনিট রয়েছে। মেডিসিনসহ ৭টি ওয়ার্ডেই মশাবাহিত এ ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মুগদা হাসপাতালের ১০ম ও ৮ম তলায় ডেঙ্গু ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়েছে। এ হাসপাতালের আরো ৩টি ফ্লোর ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বরাদ্দ। ডেঙ্গুরোগীদের জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ডের সব বেডেই রোগী। চিকিৎসক, নার্সদের ওপর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। ঢামেক, মুগদা ও মিটফোর্ডে অনেক রোগী ওয়ার্ডের বাইরে মেঝে ও করিডোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধু ডেঙ্গুরোগীদের জন্য নির্ধারিত থাকায় ডিএনসিসি হাসপাতালে রোগীরা সহজেই এই হাসপাতালে চলে যাচ্ছেন। আর গত কয়েক বছর ধরেই মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর চাপ অন্যান্য হাসপাতালগুলোর তুলনায় বেশি। তুলনামূলক কম খরচে ভালো চিকিৎসা হওয়ায় আশপাশের অনেক হাসপাতাল ছেড়ে রোগীরা এই হাসপাতালে ভিড় করেন।

এদিকে, ঢামেকে মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসা ভালো, এখানে রোগী ফেরত দেয়া হয় না, এমন নানা কারণে সারাদেশ থেকেই মানুষ ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। 

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অধিকাংশ রোগী হাসপাতালে আসছেন অত্যন্ত জটিল অবস্থায়। প্লাটিলেট মারাত্মক কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, পেট ব্যথা, রক্তক্ষরণসহ এসব উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এলেও অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করতে না পারায় মৃত্যু বেশি। এসব উপসর্গে প্রাথমিক অবস্থায় গুরুত্ব দেয়া জরুরি।

মুগদা হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম জানান, চলতি বছর ডেঙ্গুতে যে সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে, এর বেশির ভাগই ঢাকার বাইরের বাসিন্দা। তবে এখন ঢাকার রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সচেতনতার অভাব, প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসার ঘাটতি ও গ্রামীণ এলাকায় বিশেষায়িত চিকিৎসা না থাকায় বহু রোগী মারাত্মক অবস্থায় রাজধানীতে আসছেন। ফলে বাঁচানো সম্ভব হয় না। এতে মৃত্যুহার বাড়ছে।

মৃত্যুশূন্য দিনে নতুন ডেঙ্গুরোগী ৫১০

শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গু পরিস্থিতির দৈনিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫১০ জন। এই সময় ডেঙ্গুতে কারোর মৃত্যু হয়নি। এদিকে বৃহস্পতিবার ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ভর্তি রোগী ছিল ৭৫৫ জন। বুধবার ডেঙ্গুরোগী ছিল ৭৫৮ জন, ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ৮৪১ জন রোগী ও ৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে ডেঙ্গুতে। চলতি বছর সর্বোচ্চসংখ্যক রোগী ছিল ৫ অক্টোবর; রোগী ছিল ১ হাজার ৪২ জন। আর চলতি বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চসংখ্যক মৃতের সংখ্যা ১২। ২১ সেপ্টেম্বর এত লোকের মৃত্যু হয় ডেঙ্গুতে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুর দৈনিক তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে সর্বোচ্চ রোগী ছিল ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশন বাদে) ১৮১ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। সেখানে রোগী ১১৬ জন। তৃতীয় অবস্থানে চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৮ জন। এরপর বরিশাল বিভাগে ৬৫ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৬ জন আর ময়মনসিংহ বিভাগে ২৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে খুলনা, রংপুর, সিলেট আর রাজশাহী বিভাগের ডেঙ্গুরোগীর কোনো তথ্য ছিল না। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫২৬ জন। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৮ হাজার ২৮০ জন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র মিলেছে ৫৫ হাজার ৩৬০ জনের। ডেঙ্গুতে মোট ২৪৩ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু (১২২ জন) হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। চলতি অক্টোবর মাসের ১৭ দিনে ডেঙ্গুরোগী ১০ হাজার ৯৩৮ জন। প্রাণ হারিয়েছে ৪৫ জন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষক-কর্মচারীদের

প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষক-কর্মচারীদের

কোহলি-রোহিতের ব্যর্থতায় বিপর্যয়ে ভারত

ওয়ানডে সিরিজ কোহলি-রোহিতের ব্যর্থতায় বিপর্যয়ে ভারত

কার্গো ভিলেজে আগুন : এখনও ধ্বংসস্তূপ থেকে উড়ছে ধোঁয়া

কার্গো ভিলেজে আগুন : এখনও ধ্বংসস্তূপ থেকে উড়ছে ধোঁয়া

ব্রাজিলে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু

ব্রাজিলে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App