৪০ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে রপ্তানি খাতে এমন সংকট দেখিনি : এ কে আজাদ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫২ এএম

হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ। ছবি : সংগৃহীত
দেশের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ বলেছেন, ৪০ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে রপ্তানি খাতে এমন সংকট তিনি আর কখনো দেখেননি। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীরা এখন হতাশা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
রবিবার (২০ জুলাই) রাজধানীর এক হোটেলে দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমের আয়োজনে ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কে আজাদ বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা এই খাতকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছি। অথচ আজ আমরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কে আজাদ জানান, সম্প্রতি এক বড় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের হেড অফিসে তাকে ডেকে জানানো হয়েছে, তারা নিজ দেশের সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অবস্থান যাচাই করেছে। তাদের ভাষায়, বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল, ভালো কোনো ফলাফল প্রত্যাশা করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় হতাশ হয়ে তিনি একাধিক উপদেষ্টাকে ফোন করেন। তার পরদিনই বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে জানান, ৯৫ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়েছে, বাকি ৫ শতাংশ নিয়ে কাজ চলছে।
আরো পড়ুন : কার্যকর বাজার তদারকির মাধ্যমে ভোক্তা ও ব্যবসায়ের স্বার্থ সুরক্ষার আহ্বান
তবে ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা কাটছে না। এ কে আজাদ বলেন, আমার এক ক্রেতা ই-মেইলে জানিয়েছে, ১ তারিখ থেকে শুল্ক আরোপ হলে আমাকে শুল্কের ৩৫ শতাংশ বহন করতে হবে। প্রশ্ন হলো, এই শুল্ক আমরা কীভাবে বহন করব?
ইন্দোনেশিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেখানে সরকার ও ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে লবিস্ট নিয়োগ করেছে, প্রতিটি স্তরে আলোচনা করেছে। অথচ বাংলাদেশে এমন কোনো উদ্যোগই নেই।
এ কে আজাদ বলেন, আপনারা বলছেন, সাত-আট মাসের জন্য দায়িত্বে আছেন। এরপর চলে যাবেন। তখন আমরা যাব কোথায়? কার কাছে আমাদের দায়িত্ব ফেলে যাচ্ছেন?
আলোচনায় অংশ নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে মনে হচ্ছে আমরা এমন একটা অত্যন্ত নিরপরাধ, নির্দোষ ও নিষ্পাপ সরকারকে সঙ্গে নিয়ে সামনে আগানোর চেষ্টা করছি। এর ব্যাখ্যা দিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমরা এখানে বসে এত কিছু বুঝি আর ওনারা (সরকারে থাকা ব্যক্তিরা) বোঝেন না, আমার কাছে তো এটি আশ্চর্য লাগে। এ জন্যই বললাম এত নির্দোষ, নিরপরাধ ও নিষ্পাপ সরকার আমি দেখিনি।
তিনি বলেন, কোনো দুর্বল সরকার সফল দর-কষাকষি করেছে ইতিহাসে এ নজির খুব কম। এটি এমন এক সমন্বয়হীন সরকার, যার বিভিন্ন কাজের নেতৃত্বে কে আছেন, এটা বোঝা যায় না। এ ছাড়া এ ধরনের সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা না থাকলে সেটিও বড় দুর্বলতার অংশ হয়। বর্তমানে যেহেতু সরকার দুর্বল, সেহেতু শুল্কের আলোচনায় দুর্বলতার ঘাটতি পূরণ করতে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন ছিল, সেটি হয়নি।
এদিকে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানান, লবিস্ট নিয়োগে তারা ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে তিনি বলেন, লবিস্টদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাচ্ছি না, কারণ বেশিরভাগই ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের পক্ষে যুক্ত।
তিনি জানান, দুই দিন আগে পর্যন্ত যারা দর-কষাকষি করছিলেন, তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিলেন, ইউএসটিআর নয়, চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এটা বুঝতে আমাদের দেরি হয়ে গেছে।
দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাতের জন্য এমন অনিশ্চয়তা আরো দীর্ঘায়িত হলে তা অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করবে বলে মনে করছেন আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা। এখনই সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।