গাজায় মানবিক বিপর্যয় চরমে: ক্ষুধায় একদিনেই ১৮ জনের মৃত্যু

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪৫ এএম

গাজায় চলমান সংঘাত ও মানবিক বিপর্যয়ে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ৮৯৫ জনে। ছবি : সংগৃহীত
ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে গাজার মানবিক সংকট। প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে না পারায় ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও অপুষ্টিতে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছে শিশুসহ অসহায় মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে চলমান সংঘাত ও মানবিক বিপর্যয়ে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৮ হাজার ৮৯৫ জনে।
মৃতদের মধ্যে রয়েছে মাত্র চার বছরের শিশু রাজান আবু জাহের রবিবার দেইর আল-বালাহর আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, রাজান চরম অপুষ্টি ও ক্ষুধার শিকার হয়ে মারা গেছে।
শুধু ক্ষুধাই নয়, ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলাও থেমে নেই। রবিবার গাজা জুড়ে অন্তত ১১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের অনেকে খাদ্য সহায়তার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্রগুলো। খান ইউনুস শহরের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় শরণার্থীদের অস্থায়ী তাঁবু লক্ষ্য করে চালানো বোমা হামলায় এক শিশুসহ অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরো অনেকে।
আরো পড়ুন : গাজায় অনাহারে ৩৫ দিনের শিশুর মৃত্যু, নিহত আরো ১১৬
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধের পর থেকে ইতোমধ্যেই প্রায় ৫৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৯৮০ জনে। নিহতদের বড় অংশই নারী ও শিশু।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক অফিস (উনোচা) জানিয়েছে, গাজার পরিবারগুলো এখন ‘বিপর্যয়কর ক্ষুধার’ মুখোমুখি। মার্চ থেকে জুন মাসের মধ্যে ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রায় ৭৪ হাজার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৫,৫০০ শিশুর গুরুতর অপুষ্টি ধরা পড়েছে এবং ৮০০ শিশু জীবনঝুঁকিতে রয়েছে।
ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, শিশুরা ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। কিছু শিশু তো সাহায্য পৌঁছানোর আগেই মারা যাচ্ছে। সংস্থাটি আরো অভিযোগ করেছে, গাজাকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে চলা গণমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও সাংবাদিকদের প্রবেশ ঠেকাচ্ছে। তারা বলছে, ৬৫০ দিন ধরে গাজা এক ভয়াবহ দৃশ্যের সরাসরি সম্প্রচারে পরিণত হয়েছে, অথচ বিশ্ব এখনও তা দেখতে পাচ্ছে না।
রবিবারই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দেইর আল-বালাহ অঞ্চলের বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দাদের নতুন করে ঘরছাড়া হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে, যা বিপর্যস্ত জনগণকে আরো অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
গাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভও বাড়ছে। রবিবার মরক্কোর রাজধানী রাবাতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। তারা মরক্কো সরকারের কাছে স্পষ্টভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
অবরোধ ও হামলার কারণে গাজার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে। অবিলম্বে পূর্ণ মানবিক সহায়তা নিশ্চিত না হলে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।