চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২৫ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
লন্ডনের মুরফিল্ডস আই হসপিটালে একদল দৃষ্টিহীন রোগীর চোখে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক এক ‘প্রিমা ইমপ্লান্ট’। চিকিৎসকদের দাবি, আন্তর্জাতিক এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল “অবিশ্বাস্য”। ইমপ্লান্ট বসানোর পর রোগীরা আবার দেখতে পাচ্ছেন।
৭০ বছর বয়সী দৃষ্টিহীন রোগী শিলা আরভিন এখন বই পড়তে, সুডোকু খেলতে এবং ক্রসওয়ার্ড মেলাতে পারছেন। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি অভিজ্ঞতাটিকে অভূতপূর্ব বলে উল্লেখ করেন।
এই প্রযুক্তি মূলত ‘ড্রাই এজ-রিলেটেড মাকুলার ডিজেনারেশন’-এর জটিল ধাপ ‘জিওগ্রাফিক অ্যাট্রোফি’ আক্রান্ত রোগীদের জন্য আশার আলো জ্বালিয়েছে। রোগটি মূলত রেটিনার কোষ নষ্ট করে দৃষ্টি ঝাপসা করে দেয়, বিশেষত বয়স্কদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫০ লাখ এবং যুক্তরাজ্যে আড়াই লাখের বেশি মানুষ এই রোগে ভুগছেন।
ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক বায়োটেক প্রতিষ্ঠান সায়েন্স করপোরেশন তৈরি করেছে এই মাইক্রোচিপ—‘প্রিমা ইমপ্লান্ট’। এর কার্যপ্রণালি হলো- অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মানুষের চুলের মতো পাতলা, ২ মিলিমিটার আয়তনের ফটোভোলটাইক চিপটি রেটিনার নিচে বসানো হয়। রোগীরা বিশেষ ভিডিও ক্যামেরাযুক্ত চশমা পরেন, যা ইনফ্রারেড রশ্মির মাধ্যমে ছবি ইমপ্লান্টে পাঠায়।
এরপর একটি ক্ষুদ্র প্রসেসরের মাধ্যমে উন্নত করা ছবিটি ইমপ্লান্ট হয়ে অপটিক নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়, ফলে রোগীর দৃষ্টি ফিরে আসে।
মুরফিল্ডস হসপিটালের কনসালট্যান্ট অপথ্যালমিক সার্জন এবং যুক্তরাজ্য ট্রায়ালের নেতৃত্বদানকারী ড. মাহী মুকিত বলেন, এটি প্রথম ইমপ্লান্ট যা কার্যকরভাবে রোগীদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছে। তারা এখন পড়া-লেখার মতো কাজে এটি ব্যবহার করতে পারছেন, এটি এক বিশাল অগ্রগতি।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, ইউরোপের পাঁচ দেশে ৩৮ জন রোগীর মধ্যে ৩২ জনের চোখে ইমপ্লান্ট বসানো হয়, যার মধ্যে ২৭ জন পড়তে সক্ষম হন। এক বছর পর তাঁদের দৃষ্টিশক্তি আরো উন্নত হয়।
শিলা আরভিন বলেন, ৩০ বছর পর আবার বই পড়তে পারছি, এ যেন নতুন জীবন পেলাম। প্রযুক্তি এত দ্রুত এগোচ্ছে, আমি এর অংশ হতে পেরে ভাগ্যবান।
ড. মুকিত আশা প্রকাশ করেছেন, এই প্রযুক্তি শিগগিরই ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)-এর আওতায় রোগীদের জন্য উন্মুক্ত করা যাবে।
মাকুলার সোসাইটির গবেষণা পরিচালক ড. পিটার ব্লুমফিল্ড একে “উৎসাহব্যঞ্জক ও বিপ্লবী অগ্রগতি” বলে অভিহিত করেছেন। তবে চিকিৎসকদের সতর্কতা—যাদের অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি কার্যকর হবে না।