দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এই বিচার নয় : চিফ প্রসিকিউটর
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৬ পিএম
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে র্যাবের টিএফআই সেলে বিরোধী মতাদর্শের মানুষকে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের যে বিচার চলছে, তা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয় বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে গুমের মামলায় সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, র্যাবের যেসব কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে তাদের ভার্চ্যুয়াল শুনানির আবেদন এক আইনজীবী করেছেন—তবে আদালত সেটি নামঞ্জুর করেছেন। তিনি বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যেন এই বিচারকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন, যা শুনানিতে লক্ষ্য করা গেছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, এই বিচার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়। আমরাও স্পষ্ট করেছি—এটি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা নয়। অভিযোগগুলোর সময়ে আসামিরা সামরিক শৃঙ্খলার বাইরে ছিলেন, তখন তারা র্যাবে কর্মরত ছিলেন। তাদের অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তাই তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার আবেদন আদালত খারিজ করেছেন।
আরো পড়ুন : বাংলাদেশে প্রবেশের পর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পাবেন তারেক রহমান
আদালত আরো বলেন, আইনের চোখে সব নাগরিক সমান। অভিযোগগুলো গুরুতর হলেও দণ্ডপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা নির্দোষ বিবেচিত হবেন, তবে আসামি হিসেবে সাধারণ সুবিধার বাইরে কোনো বাড়তি সুবিধা পাবেন না।
র্যাবের টিএফআই সেলে বিরোধীদের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ করেছে প্রসিকিউশন। আসামিপক্ষ অব্যাহতির আবেদন করেছে। সময় চাওয়ার পরবর্তী শুনানির তারিখ আগামী ১৪ ডিসেম্বর ঠিক করেছে ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে সকাল ১০টার পর সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে ‘বাংলাদেশ জেল-প্রিজন ভ্যান’ লেখা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সবুজ গাড়িতে করে গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তারা হলেন—র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অব.), কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
পলাতকদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ ও র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।
২৩ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। এর আগে ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১০ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল–১। পাশাপাশি পলাতকদের সাত দিনের মধ্যে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত তারিখে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করেন আদালত।
৮ অক্টোবর প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় যা পরে ট্রাইব্যুনাল আমলে নেয়।
