ঋতুরাণী শরতের প্রথম দিন আজ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:১৯ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
শ্রাবণের মেঘভাঙা জল-থইথই বিষণ্নতাকে পেরিয়ে বাংলার দুয়ারে কড়া নাড়েছে শুভ্রতার ঋতু শরৎ। পহেলা ভাদ্রের সঙ্গে এসেছে বর্ষার পরের নির্জলা সৌন্দর্য, যার ছোঁয়ায় প্রকৃতি যেন নতুন রঙে রঙিন। আষাঢ়-শ্রাবণের বর্ষা-ধোয়া দিনের ক্লান্তি, গাছে গাছে পাখির গান আর নদীর ঢেউয়ের সুরে মিশে হারিয়ে যায়। আর শরতের প্রতিটি সকাল ও সন্ধ্যা যেন মানবজীবন নতুন আনন্দে ভরে তোলে।
শরতের আকাশে ওড়ে তুলার মতো হালকা মেঘ, বাতাসে দোলে সাদা কাশফুল, আর মাঠ-ঘাসের সবুজে ভরে ওঠে মনোরম দৃশ্য। এই মোহনীয় সৌন্দর্যের জন্যই এ ঋতুকে বলা হয় ‘ঋতুরাণী’। বাংলার কবি-সাহিত্যিকরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই ঋতুকে আকাশের আড়ালে, নদীর ঢেউয়ে এবং কাশফুলের কোমল ছোঁয়ায় খুঁজে দেখেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন—
"আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা–
নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা।
এসো গো শারদলক্ষ্মী, তোমার শুভ্র মেঘের রথে,
এসো নির্মল নীলপথে..."
আর কবি বিনয় মজুমদারের বর্ণনা–
"শরতের দ্বিপ্রহরে সুধীর সমীর-পরে জল-ঝরা শাদা শাদা মেঘ উড়ে যায়; ভাবি, একদৃষ্টে চেয়ে, যদি ঊর্ধ্ব পথ বেয়ে শুভ্র অনাসক্ত প্রাণ অভ্র ভেদি ধায়!"
শরতের সঙ্গে বাঙালির জীবন অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। ক্ষেতে পাকা ধানের সবুজ চারা, গাছে গাছে পাকা তাল, এবং সেই তাল দিয়ে তৈরি পিঠা-পায়েস সবই শরতের সঙ্গী। এ ঋতু বাঙালির উৎসব, সংস্কৃতি ও খাদ্যের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজা এই ঋতুর আনন্দকে সর্বোচ্চে পৌঁছে দেয়। প্যান্ডেল, মণ্ডপ, দীপের আলোকছটা সব মিলিয়ে শরৎকালকে এক মোহনীয় রূপ দিয়েছে।
আরো পড়ুন : শুভ জন্মাষ্টমী আজ
রাতের জ্যোৎস্না শরতের সৌন্দর্যে আরেক মাত্রা যোগ করে। চাঁদের আলোয় ভরা মাঠ, হালকা হাওয়া, আকাশে উড়ন্ত পাখি সবই মনে করায় প্রকৃতির নীরব কিন্তু গভীর কাব্যিক ছোঁয়া। রাজধানীসহ দেশের নানা প্রান্তে প্রতিবছর শরৎ বরণের নানা আয়োজন হয়। তবে এবার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে উৎসবের আবহ কিছুটা শান্ত, তবু মানুষের মনে শরতের আনন্দ ও শারদীয় স্মৃতির ঝলক এখনও অনুরণিত।
শরতের এই মোহনীয় সৌন্দর্য শুধু চোখে নয়, মনেও নতুন উদ্দীপনা জাগায়। প্রকৃতি, সংস্কৃতি, খাদ্য ও উৎসব সব মিলিয়ে শরৎ বাঙালির জন্য এক নতুন প্রফুল্লতার বার্তা নিয়ে আসে। ঋতুরাণী শরত এসেছে শুভ্রতা, আনন্দ এবং কাব্যিক চেতনার এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে বাংলার হৃদয়ে।