×

রাজনীতি

জাতীয় নির্বাচন

সমঝোতার জন্য দর কষাকষিতে দলগুলো

Icon

হরলাল রায় সাগর

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৫৫ পিএম

সমঝোতার জন্য দর কষাকষিতে দলগুলো

ছবি : সংগৃহীত

কোন আসন কে নিবে, কোন আসন ছাড়লে বা পেলে কার কতটুকু লাভ- তা নিয়ে চুলচেরা হিসাব চলছে রাজনৈতিক দলগুলোতে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলগুলোর মধ্যে চলছে এমন আসন ভাগাভাগি কিংবা সমঝোতার দর-কষাকষি। এই ‘আসন ভাগাভাগি’র কৌশলগত লড়াইয়ে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে রাজনীতিতে।

একদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে, আরেক দিকে সমঝোতার দর-কষাকষি চলছে। এককভাবে ভোটের লড়াইয়ের ঝুঁকি নিতে চাইছে না বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। দল দুটি কৌশলে ছোট-মাঝারি শক্তির দলগুলোকে কাছে টানতে চাইছে। এজন্য গ্রহণযোগ্য ছাড় দিতে প্রস্তুত তারা।

এই মুহূর্তে বিএনপি অন্তত ৪০টি আসন নিয়ে ছোট দলগুলোর সঙ্গে দর-কষাকষিতে বসেছে। আর জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে রাখার ঘোষণা দিলেও ১০০ আসন ছাড়তে প্রস্তুত রয়েছে। একইভাবে ছোট দলগুলো সর্বোচ্চ সুবিধা নেয়ার সুযোগ খুঁজছে। কোন দলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলে, কোন আসনে ভোট করলে বিজয়ে ঝুঁকি কম হবে- তা হিসাব করে এগুচ্ছে তারা। শুধু আসন হলেই তো হবে না, দলীয় ভোটারদের সর্মথন এবং ভোটের মাঠে প্রার্থীর সামার্থ্যরে বিষয়টাও সামনে রয়েছে। অন্দরমহলে ভোটের এসব হিসাবনিকাশ চললেও এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়। 

ইতোমধ্যে মনোনীত ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। ঘুরছেন ভোটরদের দ্বারে দ্বারে, করছেন সভা-সমাবেশ। বিদ্রোহী প্রার্থীরাও নির্বাচনী প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। দোয়া চেয়ে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন সাঁটিয়েছেন। সারাদেশে বইছে নির্বাচনী হাওয়া।

আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট নাগরিক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি। আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে নির্বাচনী সংস্থাটি।   

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। তবে ইতোমধ্যে একজন প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেয়া এই প্রার্থীদের মধ্যে দলের হেভিওয়েট নেতারা বাদ পড়েছেন, আবার কোনো কোনো আসনে অজনপ্রিয় ও বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ-আন্দোলন চলে আসছে। বাকি ৬৩টি আসনে ধানের শীষের প্রার্থী দেয়া হয়নি।

এই ফাঁকা আসনগুলো ঘিরে চলছে অনেক জল্পনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব ছোট দল বা জোটের সঙ্গে বিএনপি জোট করবে কিংবা আসন ভাগাভাগিতে যাবে- তাদের এই আসন ছেড়ে দেয়া হবে। এমনকি প্রার্থী দেয়া আসনগুলোতেও পরিবর্তন আসতে পারে। এর আগে বিএনপির কাছে ১০৩ জনের প্রার্থীতালিকা জমা দিয়েছিল যুগপতের শরিকরা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই মুহূর্তে অন্তত ৪০টি আসন নিয়ে কয়েকটি দলের সঙ্গে দেন-দরবার চলছে বিএনপির। এর মধ্যে ১২ দলীয় জোটের ৩টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) ২, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ১টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ১টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের ১টি, ছয়টি রাজনৈতিক দলের মোর্চা গণতন্ত্র মঞ্চের ৫টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ৫টি এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থর ১টিসহ মোট ১৯টি আসন নিয়ে সমঝোতার কথা চলছে।

এছাড়া জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ২০টি আসন চেয়েছে বিএনপির কাছে। এসব দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কথাবার্তা অব্যাহত রয়েছে। অবশ্য গণতন্ত্র মঞ্চ, এনসিপিসহ বিভিন্ন দল ইতোমধ্যে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে এবং আরো প্রার্থী দেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া একেক সময় একেক দল ঘোষণা দিচ্ছে কোনো দলের সঙ্গে জোট বাধার। 

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এখন পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করেনি আনুষ্ঠানিকভাবে। চলতি বছরের শুরুতেই দলটি ৩০০ আসনে প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করে নির্বাচনী মাঠে চমক দেখাতে সক্ষম হয়েছে। প্রার্থীরা মাঠে রাত-দিন কাজ করছেন। সব আসনেই তাদের একক প্রার্থী। তবে ‘আসন সমঝোতার’ ভিত্তিতে অংশ নিতে পারে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল। অনেকের ধারণা, বেশি দলের আলাদা অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনটি যাতে অংশগ্রহণমূলক হিসেবে মানুষের কাছে বিবেচিত হয়, সেজন্যই এ কৌশলটি নিতে পারে দলটি। তাদের মতে, বিএনপি সমমনাদের জন্য সুনির্দিষ্ট আসন রেখে দলীয় প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করায় এখন জামায়াতও একই পথে হাঁটতে পারে।

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) সংসদ নির্বাচন, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে নভেম্বরে গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে নানা কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা সাতটি দল। এ কারণেই আট দলের শরিক অপর সাতটি দলের জন্য প্রয়োজনীয়-সংখ্যক আসন ছাড়বে জামায়াত। এ জোটের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করে বলেছে, গত এক সপ্তাহ ধরেই তারা আসন ভাগাভাগি নিয়ে কাজ করছেন। জামায়াত শরিকদের জন্য কতটি আসন ছাড়বে- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর কারো কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

সম্প্রতি জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনায় দলীয় একটি সমাবেশে বলেছিলেন, সব ইসলামপন্থিদের এক ছাতার নিচে আনতে জামায়াত প্রয়োজনে ১০০ আসন ছাড় দেবে। তবে ৮ দল এখন সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। তারা এখন একমত, যাকে যে আসনে মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হবে; তাকে সেখান থেকে মনোনয়ন দেয়া হবে। তিনি শরিকদের মধ্যে যে দলেরই হন। সবাই তার জন্য কাজ করবেন। তারা এখন বিজয়ী হতে চান এবং ইসলামকে বিজয়ী করতে চান। যাকে যেখান থেকে মনোনয়ন দিলে জিতবে তাকেই চ‚ড়ান্ত করবে ৮ দল। ইসলামপন্থিদের বাক্স হবে একটি। শুধু আট দল নয়, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চান তারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

পরিবার থেকে রাজনীতি: বাংলাদেশের সামাজিক ও নৈতিক চিত্র

পরিবার থেকে রাজনীতি: বাংলাদেশের সামাজিক ও নৈতিক চিত্র

মানবতাবিরোধী অপরাধে মাহবুব উল আলম হানিফের বিচার শুরু

মানবতাবিরোধী অপরাধে মাহবুব উল আলম হানিফের বিচার শুরু

পর্যবেক্ষকদের নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান সিইসির

পর্যবেক্ষকদের নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান সিইসির

চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা নিয়ে হাইকোর্টের রায় যেদিন

চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা নিয়ে হাইকোর্টের রায় যেদিন

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App