সুলতানার সংসার চলছে ভ্যানের হ্যান্ডেলে
পলাশ হোসেন, পাবনা থেকে
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০১:১৩ পিএম
মোছা. সুলতানা খাতুন। ছবি : ভোরের কাগজ
পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার বনয়ারীনগর ইউনিয়নের সোনাহারা গ্রামের মোছা. সুলতানা খাতুন (২৫)। পেশায় তিনি একজন অটো ভ্যানচালক। শুনে অনেকেই অবাক হন, কেউ কেউ ঠাট্টাও করেন তবুও জীবনের হাল ধরে এগিয়ে চলেছেন এই তরুণী।
দিনমজুর বাবা মুনতাজ আলী ও গৃহিণী মা বেলে খাতুনের বড় মেয়ে সুলতানা। তিন বছর আগে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছিল একই উপজেলার বিলচাদু গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে। কিন্তু বিয়ের অল্প কিছুদিন পরই জানতে পারেন, তার স্বামী মাদকাসক্ত। শুরু হয় নির্যাতন আর অভাবের জীবন। শেষ পর্যন্ত একদিন সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন সুলতানা।
সেখান থেকেই শুরু হয় তার নতুন এক লড়াই। প্রথমে অন্যের অটো ভ্যান ভাড়ায় চালাতেন সুলতানা। প্রতিদিন যা আয় করতেন, তার বড় অংশই চলে যেত মালিকের হাতে। পরে বাবা-মা কিস্তিতে টাকা তুলে কিনে দেন একটি পুরোনো ভ্যান। এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তায় ছুটে বেড়ান সুলতানা। দিনে আয় হয় দুই থেকে তিনশ টাকা। সেই টাকাতেই চলছে তার সংসার।

সুলতানা খাতুন বলেন, শুরুতে সবাই হাসত, বলত মেয়ে মানুষ ভ্যান চালাবে? কিন্তু এখন সেই রাস্তাতেই আমি নিজের ঘাম দিয়ে সংসার চালাই। কেউ সাহায্য না করলেও আমি থামব না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।
তার মা বেলে খাতুন বলেন, আমার মেয়ে ছোটবেলা থেকেই কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছে। এখন ভ্যান চালায় এটা শুনে অনেকে হাসে, কিন্তু আমি গর্ব করি। মেয়েটা নিজের ঘাম দিয়ে সংসার চালাচ্ছে।
প্রতিবেশীরা বলেন, আগে ভাবতাম মেয়ে হয়ে ভ্যান চালানো লজ্জার কাজ। এখন দেখি ওই মেয়েটাই তো সবার উদাহরণ হয়ে গেছে। ওর মতো মেয়েরাই আমাদের সমাজের গর্ব।
স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, সুলতানা শুধু একজন অটো ভ্যানচালক নন, তিনি দৃঢ়তা, আত্মসম্মান ও নারীর সক্ষমতার প্রতীক। তবে একা একজন নারী হিসেবে রাস্তায় গাড়ি চালানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বিত্তবান ব্যক্তি ও উপজেলা প্রশাসনের উচিত তার পাশে দাঁড়ানো, যেন তিনি একটি স্থায়ী রোজগারের ব্যবস্থা পেতে পারেন।
